প্রশ্ন: কিসব কারণে বিয়ের বরকত নষ্ট হয়ে যায়?
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম
উত্তর: বিবাহ পরম পূণ্যের কাজ। একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। এর দ্বারা জীবন হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত। একটি পরিবর্তন এনে দেয় জীবনে। শুরু হয় আরেকটি নতুন অধ্যায়। জীবনে এ অধ্যায় দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ বয়ে আনে। বিবাহ দ্বীন-দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ বয়ে আনতে পারে, যদি রাসূল সা. এর অনুসৃত তরিকা অনুযায়ী হয়। দ্বীনের সীমা লংঘিত না হয়। ইসলামে বিয়ের জন্য সুনির্দিষ্ট নিয়ম কানুন ও বিধিমালা রয়েছে। এই নিয়ম বিধানকে উপেক্ষা করে নিজেদের খেয়াল খুশী মত বিয়ের কার্যাদি সমাধা করার মধ্যে কোন কল্যাণ নেই, রবং রয়েছে সব ধরণের অকল্যাণ, অশান্তি।
বিবাহ একটি সুন্নত। সুতরাং বিবাহ সুন্নত তরিকায় সংঘঠিত করাই সমীচীন। কিন্তু আধুনিক সমাজে মুসলিম পরিবারে বিয়ে-শাদীতে কুসংস্কার ঢুকে গিয়েছে। আধুনিকতার নামে চলছে অপচয়, অশ্লিলতা, বেহায়াপনা, অবাধ্যতা। চলছে অকল্যাণ ও সুন্নত বহির্ভুত গর্হিত কর্মকান্ড। যা বিয়ের বরকত নষ্ট করে দেয়। বাগদান থেকে শুরু করে বিয়ের কিছু দিন পর পর্যন্ত যত রসুম-রেওয়াজ হয় সবই রাসূল (সা.) এর অনুসৃত তরিকার পরিপন্থি।
বরের মাথায় ফুলের মালা, হাতে রঙিন কাপড় পড়ানো, জ্বিন-ভুতের ভয়ে কোমরে লোহার বেড়ী বাঁধা, গায়ে হলুদ, বরের হাতে মেহেদী দেওয়া, কোন নারী-ভাবী কর্তৃক বরকে গোসল দেয়া, একে অপরকে রং দেওয়া, নারীদের নৃত্য প্রদর্শণ, নায়ক-নায়িকা, গায়ক-গায়িকাদের নাচ-গান-বাজনা-তামাশা, আতশবাজি, যুবক-যুবতিদের অবাদ মেলামেশা ইত্যাদি। আর যারা সামান্য সম্পদশালী তারা গেইট বেধে রকমারি বাতি জ্বালিয়ে রাস্তা থেকে বাড়ি পর্যন্ত সাজিয়ে জাহান্নামের আকৃতি ধারণ করানো দেখে মনে হয় যে, আল্লাহ তা’লা তাদেরকে যে ধন-সম্পদ দান করেছেন তা শুধুমাত্র বিয়ে-শাদীতে লুটিয়ে দেয়ার জন্য দান করেছেন। এ ছাড়া আর কোন ব্যায়খাত ধার্য করেননি।
আমাদের সমাজ রাসূল (সা.) এর কর্মনীতি থেকে দূরে সরে গিয়েছে। প্রচলিত বিয়ে-শাদীর আনুষ্টনিকতা রাসূল (সা.) এর আনুগত্যমুলক নয়। যা আছে তা একমাত্র ইজাব-কবুলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ বলা যায়। রাসুল (সা.) এর স্ত্রী খাদিজা (রা.)’র ইন্তিকালের পর হযরত আয়েশা (রা.)’র সাথে রাসূল (সা.) এর বিবাহ কোন আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই সুসম্পন্ন হয়েছিল। ওয়ালিমার দাওয়াত রাসূল (সা.) মাত্র এক পেয়ালা দুধ দিয়েই সম্পন্ন করেছিলেন।
রাসুল (সা.) এর কলিজার টুকরা মেয়ে হযরত ফাতিমা (রা.)’র বিবাহের সময় মাত্র এক প্লেট খেজুর উপস্থিত জনতার মাঝে বন্টন করেন আড়ম্বরপূর্ণ কোন আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই সম্পন্ন হয়েছিল। বরের সাথে আগত মেহমানদের আয়োজনে শত শত মানুষকে খাওয়ানোর জন্য মুরগির ফ্রাই, বিফ ভূনা আর রকমারি খাবারের আয়োজন করেন নাই। যদি আনুষ্টানিকতার মধ্যে কোন বরকত নিহিত থাকতো তাহলে রাসূল (সা.) কখনোই তা পরিত্যাগ করতেন না; বরং আড়ম্বরপূর্ণ ভোজানুষ্টান করতে পারতেন। তিনি এসব করেননি যা থেকে পরিস্কার হয় যে, এহেন অনুষ্ঠানের জন্য অপচয় করা, ধার-কর্য করে অথবা হাত পেতে অর্থ সংগ্রহ করে ব্যয় করা নিতান্ত অনর্থক এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির পরিপন্থি।
সমাজে মান হানির ভয়ে অনেকে বছরের পর বছর পার হলেও বিয়ে করার সাহস করতে পারছে না। যারা করছে, তারা সুস্থ সাংস্কৃতিক জীবনযাপনের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ বিবাহ করতে হচ্ছে ধার-কর্য করে। টিভি, ফ্রীজ, মোটর সাইকেল, কাঠের ফার্নিচার, যৌতুক ইত্যাদি দেয়ার সামর্থ না থাকায় এবং বরের সাথে আগত শত শত অতিথির মেহমানদারির ভোজানুষ্ঠান করতে অক্ষমতার কারণে অনেক পিতা বিয়ে দিতে পারছেন না তার বিবাহ উপযুক্ত মেয়েকে। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠান করতে পারছেন না তাই লোকসমাজে মানহানি ও সমালোচনার ভয়ে বিবাহ উপযুক্ত ছেলের বিয়ে সম্পন্ন করতে পারছেন না অনেক অভিভাবকরা। এই হচ্ছে আমাদের সমাজ!
যৌতুক নারীর প্রতি একটি অভিশাপ। মস্তবড় একটি জুলুম। যৌতুক দিতে না পারার কারণে বহু নারীর বিয়ে হয় না। বিয়ে হলেও এই যৌতুকের কারণেই অনেকের সংসার সুখের হয় না। লোভী, সংকীর্ণ মন-মানসিকতা সম্পন্ন স্বামীর ঘরে অপমান ও নির্যাতন সহ্য করতে হয় বহু নারীকে। অনেক নারীকে নরপিশাচ স্বামীর হাতে দিতে হয় জীবনও। ইসলাম নারীর আর্থিক সামর্থ্য দানের লক্ষ্যে এবং তার সম্ভ্রমকে সম্মান জানানোর জন্য ‘মাহর’ নির্ধারিত করে দিয়েছে। কিন্তু উল্টো দেখা যায়, ‘মাহর’-এর স্থলে যৌতুকের অবৈধ আবদারের অর্থ ও স¤পদ দিতে হয় কন্যা পক্ষকে। ইসলাম এ অন্যায়কে অনুমোদন করে না।
এছাড়া বিয়ের দিন কনের বাড়িতে দলবেঁধে খাওয়ার অনুষ্ঠান। এক্ষেত্রে নারীর অভিভাবকের ঘাড়ে যেমন চাপানো হয় শত শত মেহমানের ব্যায়ভার তেমনি বরের পক্ষেও গাড়ী শুভাযাত্রা, ক্যামেরা ইত্যাদিসহ ব্যয়ের মাত্রা মুটেই কম নয়। এটা সম্পুর্ণ অনর্থক এবং অপচয়ও। কুরআনে আল্লাহ তা’লা অপচয় করা থেকে নিষেধ করেছেন এবং আপচয়কারীদেরকে শয়তানের সাথে তুলনা করেছেন। অপচয় না করার জন্য নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তা’লা বলেন- “কিছুতেই অপচয় করো না। অবশ্যই অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই; আর শয়তান হচ্ছে তার প্রতিপালকের বড় অকৃতজ্ঞ।” (সূরা বানী ইসরাইল-২৭)
উত্তর দিচ্ছেন: মুহাম্মদ আবদুল হামিদ, প্রবন্ধকার, সভাপতি : ইসলামী তরুণ সংঘ।
বিভাগ : ইসলামী প্রশ্নোত্তর
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মুসলিম জাগরণের অগ্রপথিক মুন্সী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ আজ জন্মদিন
গত সাড়ে ১৫ বছর যারা শাসন করেছে, তারা দেশকে না সাজিয়ে নিজেদেরকে সাজিয়েছে: আমীরে জামায়াত
রাজস্থানে ৩ দিনেও উদ্ধার হয়নি ৭০০ ফুট গর্তে আটকে থাকা শিশু
জকিগঞ্জে বালাউটি ছাহেবের ঈসালে সাওয়াব মাহফিলে ভক্ত-মুরিদানের ঢল
‘অন্তর্বর্তী সরকারের উদারতা এই কপালপোড়া জাতিকে অনন্তকাল ভোগাবে’
বিমান হামলায় গাজায় একসঙ্গে ৫ সাংবাদিককে হত্যা
বান্দরবানে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার নিন্দা, পুড়ে যাওয়া ঘরগুলো নির্মাণের নির্দেশ
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সচিবালয়ের ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শনে উপদেষ্টারা
গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরায়েলের
ফায়ার ফাইটার নয়নের জানাজা বাদ জোহর, অংশ নেবেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
সচিবালয়ের আগুন লাগা ভবনেই উপদেষ্টা নাহিদ-আসিফের মন্ত্রণালয়
সচিবালয়ে প্রবেশ করতে শুরু করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
চাঁদপুরে দুই উপজেলার মধ্যবর্তী সেতু ভেঙ্গে পড়েছে
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাস মালিককে কুপিয়ে হত্যা
মোজাম্বিকে কারাগারে ভয়াবহ দাঙ্গায় নিহত ৩৩, দেড় হাজার বন্দির পলায়ন
কেনাকাটার সময় আমরা সাধারণত যে ভুলগুলো করি
মিরপুরে সাংবাদিকদের ২১ বিঘা জমি এখনও ইলিয়াস মোল্লাহর দখলে!
রংপুরে আওয়ামী লীগ নেতা মিলন গ্রেপ্তার
ইসরায়েলি বর্বরতা চলছেই, গাজায় নিহত বেড়ে প্রায় সাড়ে ৪৫ হাজার
সচিবালয়ের সামনের সড়কে যান চলাচল বন্ধ, নিরাপত্তা জোরদার